জুলাই ২৫, ২০২১ সাহিত্যসভা : বসু বাসগৃহে
জুলাই ২০২১ সাহিত্যসভা : বসু বাসগৃহে
২৫শে জুলাই, ২০২১ রবিবার প্রবাসবন্ধু মাসিক পাঠচক্রের অধিবেশন বসেছিল কেটিতে সোমনাথ ও সুমিতা বসুর বাড়িতে। অতিমারীর দিনগুলিতে zoom এর মাধ্যমেই চলত সভা। এর সুবিধার দিকটা হল দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই যোগ দিতে পারতেন কিন্তু মুখোমুখি দেখা হওয়ার আনন্দটা ছিল সীমিত। জুন ২০২১ থেকে প্রবাসবন্ধুর সভ্য সভ্যারা স্থির করেছেন fully vaccinated সকলে মুখোমুখি মিলিত হতে পারেন।
বিকেল ৩:৩০ সভা শুরু হল কিছু কাজের কথা দিয়ে। পত্রিকাকে আরো interactive করা যায় কিনা, ব্লগে আরো লেখা চাই এবং ওয়েবসাইটকে আরো সমৃদ্ধ কী করে করা যায়— এই সকল বিষয়ে বিশদ আলোচনা হল। রবির অনুরোধে স্থির হল, রাজীব প্রথমে এই বিষয়গুলি একটু জেনে ও বুঝে নিয়ে সকলকে জানাবে। বাকি সকল সভ্য- সভ্যাদের ওয়েবসাইটটি ভালো করে মাঝে মাঝে একটু দেখে মতামত জানানোর অনুরোধ রাখা হল।
মালাদির আটলান্টায় চলে যাবার ব্যাপারে সকলেরই মন খারাপ। এবার magazine-এ লেখা যেন আগেই দেওয়া হয় এবং সকলে যেন সাধ্যমতো চেষ্টা করেন মালাদিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে, এই অনুরোধ রইল।
মৃণালদার কাছে কলকাতার আজকাল পত্রিকা থেকে প্রবাসবন্ধু নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে, সকলেই এই খবরে খুবই উৎসাহিত।
এবার পাঠচক্রের শুরু। প্রিয়ম্বদা কমলপ্রিয়া ছিলেন সঞ্চালিকা। তাঁর সদা হাস্যমুখ, বলাই বাহুল্য, অনুষ্ঠানটিকে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করেছিল।
প্রথম পাঠ কাজল রায়ের। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত রূপময় পালের লেখা, ‘সূর্য সেনের সোনালী স্বপ্ন’ বইটি থেকে, ‘চট্টগ্রামের পলাতক ধরিবার জন্য পুলিশের ব্যবস্থা’ অংশ বিশেষ তিনি পড়ে শোনলেন। এই তথ্য সকলেরই ছিল অজানা। ১৯৩২ সালের ২২ শে জুলাই ছিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের দিন। এই কাহিনীর পটভূমিকায়ও ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম। দেশ স্বাধীনের স্বপ্নে বিপ্লবীরা তখন সোনার হার চুরি করেও কিনতেন রিভলভার। ঘটনাটি এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে।
কাজল বাবুর জ্যাঠামশাই বিপ্লবী শৈলেশ রায় কর্তৃক ইংরেজ শাসক দলের মিস্টার এলিসনকে হত্যা ও তারপরে শৈলেশ রাযের কোনোরকমে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে এই রুদ্ধশ্বাস ঘটনাটি সকলকে মুগ্ধ ও আপ্লুত করে। ভারতের স্বাধনীতার ইতিহাসের পিছনে কত রক্ত যে ঝরেছে, আবার যেন উপস্থিত সব শ্রোতা অগ্নিদিনের সেই ইতিহাসের দিনগুলিতে মুহূর্তে পৌঁছে গেলেন।
পরের পাঠ সুমিতা বসুর : লেবানন ও আমেরিকান কবি, সাহিত্যিক ও দার্শনিক— খালিল গিব্রানের জীবন, আদর্শ, বাণী নিয়ে এক মনোজ্ঞ ও বিশদ আলোচনা এবং তাঁরই Fear কবিতাটির স্বরচিত অনুবাদ ‘ভয়’ উপস্থাপনা।
শফিক আহমেদ তাঁর শাওনকে ঘিরে আরো একটি কবিতা এবং কোনো বন্ধুর ‘আন্দোলন’ নামক খুবই যুগোপযোগী লেখা পাঠ করলেন। লকডাউনের দিনের শিকার, খাওয়াদাওয়া, দিনগত পাপক্ষয়ের মধ্যেও খাদ্য বিপ্লব, হোম ডেলিভারি, swaggy- zomato সব ব্যবস্থা—রচনাটি অত্যন্ত মনোরম হালকা মেজাজের অথচ বর্তমান সামাজিক চিত্র এখানে হুবহু পরিস্ফুট। আজকালকার দ্রুত পাল্টানো উল্টোপাল্টা সমাজিক ব্যবস্থার উপর লেখা — শ্রোতারা এক নিমেষে মনে মনে কলকাতায় হাজির।
সোমনাথ বসুর পাঠ অপরূপা প্রকৃতি ও আমেরিকার ন্যাশনাল পার্ক বিষয়ক। সদ্য তাঁরা ঘুরে এসেছেন Zion National Park, Grand Canyon ও Sedona (Arizona)। আসলে আমেরিকার ওই অঞ্চলটি (Utah, Arizona, Nevada ও Colorado) প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা। সোমনাথের লেখার নিপুণ বর্ণনায় ভ্রমণভিত্তিক তথ্যের সঙ্গে ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্বিক বিষয়গুলি মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। শ্রোতারা শুনতে শুনতে যেন বক্তারই ভ্রমণসঙ্গী হয়ে উঠলেন।
কমলপ্রিয়া রায় সৈয়দ মুজতবা সিরাজের লেখা একটি অপূর্ব এবং গা-ছমছম করা আধিভৌতিক ও ঐতিহাসিক গল্প পড়ে শোনালেন। রুদ্ধশ্বাস টানটান গল্প, পড়ার নাটকীয় ভঙ্গীতে সজীব হয়ে উঠল।
শ্যামলী মিত্রের পরিবেশনা স্বপ্নময় চক্রবর্তীর সাদা কাক-এর একটা অসাধারণ ছোটগল্প/ রম্য রচনা, এক কথায় সকলের মন কেড়ে নিল।
সব শেষে বিশ্বরূচি মিত্র-র অসম্ভব মজার লেখা – ‘উত্তমকুমার ফ্যান বোঁদে র গপ্পো’র মনোরম পাঠ শ্রোতাবৃন্দকে প্রাণ খুলে হাসার রসদ জুগিয়েছে। এ যেন সভার মধুরেণ সমাপয়েৎ। সব মিলিয়ে সভা জমজমাট !
এবারের সভায় যাঁরা পড়েননি, সকলে শ্রোতা হিসেবে আনন্দ পেয়েছেন আর তাঁদের উপস্থিতি সকলকে আনন্দ দিয়েছে। আর যাঁরা আসতে পারেননি, আপনাদের সকলের অনুপস্থিতি আমরা সকলে বিশেষ ভাবে অনুভব করেছি। আশাকরি আবার খুব তাড়াতড়ি দেখা হবে আপনাদের সঙ্গে।
বাঙালীর আড্ডা তো খানাপিনা বাদ দিয়ে নয়। আর এতো মন-ভরা পাঠ-পঠনের পর, প্রাণ-ভরা বন্ধু-সঙ্গের পর, পেট-ভরা যথারীতি খাবার খেয়ে সাঙ্গ হল সভা।
সকলে ভালো থাকুন, সকলকে ভালো আর সুস্থ রাখুন, আজ এই পর্যন্তই থাক। বাকি কথা আর পরে হবে…..
ভীষন উপভোগ করলাম গতকালের সাহিত্য সভা। সুমিতা দি ও সোমনাথ দার আন্তরিক আতিথেয়তায় এই সভায় যোগদানের আনন্দ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক দিন পর পরিচিত মুখ গুলো কে দেখে কি যে ভালো লাগছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। অত্যন্ত ভালো লাগলো সবার পড়া।