অগাস্ট ২৯, ২০২১: নমিতা রায়চৌধুরী-র লেখনীতে
রবিবার ‘প্রবাসবন্ধু’ সাহিত্য সভার বার্ষিক অধিবেশনে এবার সদস্যরা মিলিত হন সুগারল্যান্ড শহরে বসবাসরত নমিতা ও রাজীব রায়চৌধুরীর বাড়িতে।
রবিবার দিনটি যদিও ছিল ঝকঝকে রোদেলা। তবু ১৯৭৬ সালে এই দিনটিতেই সাহিত্যের জগতে যে নক্ষত্র পতন হয়েছিল তার অনুভব আজও বাঙালির মনকে ভারাক্রান্ত করে রাখে | তিনি আমাদের দুখুমিয়া! প্রেম, মানবতা ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
সভার প্রারম্ভেই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় তাঁরই রচিত ‘অভিশাপ’ কবিতার ক’টি লাইন পাঠের মাধ্যমে।
শোক প্রকাশ ও শ্রদ্ধা জানানো হয় জনপ্রিয় বাচিক শিল্পী গৌরি ঘোষকে। গত ২৬শে আগস্ট তিনি আমাদের ছেড়ে যান। এ এক অপূরণীয় ক্ষতি সাহিত্য জগতের। অপূর্ব বাচনভঙ্গির জাদুতে তিনি আবৃত্তিকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছিয়েছেন। ঘরে ঘরে সমাদৃত হয়েছে শ্রুতি নাটক। সাহিত্য জগতে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়।
এ মাসে সভা শুরু হয় অপরাহ্ন ৩:৪৫ মিনিটে। সভায় অনলাইন (স্কাইপ) যোগ দেয়ার একটি নতুন সংযোজনের প্রচেষ্টা করা হয় ।এতে অংশ নিয়েছিলেন কাজল রায় এবং পরবর্তিতে তিনি সভার টানেই যখন সশরীরে উপস্থিত হয়েছিলেন তা সকলকেই আনন্দ দিয়েছে ।
কাজের কথায় আলোচনা হয় ‘প্রবাসবন্ধু ওয়েবসাইট’নিয়ে । প্লাগ-ইনস কিভাবে যোগ করা যায় সে বিষয়ে সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় অংশ নেন রবি দে (রবিদা), নীতা সেটকর (নীতাদি) ও রাজীব রায়চৌধুরী |
প্রতিবারের মতো সভায় এবারও কিছুক্ষনের জন্য মন খারাপের মেঘ উঁকি দেয় মালবিকা চ্যাটার্জি (মালাদির) শহর ছেড়ে যাওয়া নিয়ে|
পূজো সংখ্যার লেখা পাঠানোর অনুরোধ আবারও জানান সকলকে রবিদা ।
চন্দ্রা দে (চন্দ্রাদি) সভাকে জানান শ্রদ্ধেয় অসিত সেনের ( অসিতদা) কুশল সংবাদ | অতিমারির এই ভয়ংকর সময়ে ‘ভালো আছেন’ ‘ ভালো আছি’ এই কথাগুলো সকলের মনেই স্বস্তির প্রলেপ আনে ।
অসিতদা ভালো আছেন জেনে উপস্থিত সকলেই খুব খুশি হয়েছি ।
এ মাসে সভা সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ‘শাওন’ খ্যাত কবি শফিক আহমেদ ! শফিকদা’র সাবলীলও প্রানবন্ত সঞ্চালনা ছিল প্রশংসনীয় ।
পাঠচক্রের একেবারে গোড়ার দিকে ছিলেন মোহাম্মদ তারেক (ভাই) । স্বরচিত নাটকের পূর্বের অংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণী সহ পরবর্তী নতুন অধ্যায় এমন সুন্দর ভাবে তিনি পাঠ করেছেন যা শ্রবণের সাথে সাথে নাটকটিকে যেন দৃশ্যমানও করে তুলেছিল শ্রোতাদের কাছে ।
গল্পটির শেষ কি হয় তার জন্য সেদিন উপস্থিত সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন ।
‘Intuition’ নিয়ে মৃনালদা’র স্বরচিত প্রবন্ধটি ছিল বহুমুখী আলোচনার উৎপত্তি কারক ! পাঠ পরবর্তী আলোচনায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে সকল সদস্যরাই অংশ নেন। মতামত , অভিজ্ঞতা ও ধারণার বিনিময় চলে বেশ কিছুক্ষন ।
সঞ্চালক নিজে ছিলেন ঠিক তার পর পরই।শুরুতেই কবি নজরুলের ‘বারাঙ্গনা’ কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং পরে স্বরচিত কবিতা ‘মন তুমি হয়ো না বেইমান’ তিনি নিজে পাঠ করেন । তার কবিতা ‘চাওয়া-পাওয়া’পাঠ করেছেন সাহিদা লস্কর সুদূর ক্যানিং শহর থেকে। অডিও ভার্ষনটি সভায় সকলের মন জয় করে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কে নিয়ে মনোগ্রাহী একটি সংগৃহীত লেখা পড়ে শুনিয়েছেন নন্দিনী সরকার।
বরাবরের মতোই শ্যামলী মিত্র অপূর্ব সুন্দর পরিবেশনায় মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। শ্যামলীদির প্রথম পাঠ ছিল অবনী ঠাকুরকে নিয়ে এবং দ্বিতীয় পরিবেশনাটি ছিল একটি রম্য রচনা। লেডিকেনি থেকে ছানার জিলিপি ,সরভাজা, চিত্রকূট এমন অনেক নামই যেমন জিভে জল এনেছে সকলের তেমনি শ্যামলীদির অপূর্ব বাচনশৈলীতে সবার মনও তৃপ্তির স্বাদ নিয়েছে । ‘ঘ্রাণে অর্ধভোজন ‘হয় তবে সেদিন শ্রবনেও ভোজনের স্বাদ বোধহয় আমরা সকলেই পেয়েছি।
রবি ঠাকুরের বেশ কয়েকটি সুন্দর ছড়া আমাদের শুনিয়েছেন দরাজ গলার অধিকারী বিশ্বরুচি মিত্র।
নাহিদ সুলতানা পাঠ করেছেন সুকুমার রায়ের ‘গোঁফ চুরি‘ কবিতাটি।পাঠের রসবোধ ছিল ভীষণ উপভোগ্য !
সভা শুরু হয়েছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এর মাধ্যমে, শেষটুকুও ছিল তাঁকে ঘিরেই।
নাহিদ সুলতানা এবং মোহম্মদ তারেক পরপর দুখানি কবিতা পাঠ করেছেন । তারেকভাই এর উদাত্ত কণ্ঠে আমরা শুনেছি কবির অপূর্ব সৃষ্টি ‘বিদ্রোহী’কবিতাটি।
সভা শেষে ‘সময় থাকলে গল্পগুজব’- এ পর্য়ায়ে আড্ডাপ্রিয় বাঙালি আমরা সকলেই গুল্প আড্ডায় মেতে উঠি , হাসি আনন্দে মুখরিত হয় সময়। সেই সাথে রসনাদেবীকে তৃপ্ত করার ছিল আয়োজন ছোট্ট পরিসরে।
একটি সভা সার্থক হয়ে ওঠে সভ্য / সভ্যাদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে। সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ যারা এ মাসের অধিবেশনে উপস্থিত থেকে সভাকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলেছেন ।
যারা আসতে পারলেন না বিভিন্ন অসুবিধার কারণে সভা তাদের অভাব অনুভব করেছে শুরু থেকে শেষ অবধি।
সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন ।
পরবর্তী অধিবেশনে আবারও দেখা হবে সবার সাথে সেই কামনায়. . .
🙏
খুব মনোগ্রাহী ও চিত্তাকর্ষক সভা বিবরণী । অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় লেখা আমাদের মন জয় করলো । তবে রসনাদেবী কে তৃপ্ত করার জন্য শ্রীমতী নমিতা যে বহুল ও বৈচিত্র্যময় আয়োজন করেছিলেন তারও ছবি সহ আর একটু বিস্তারিত বিবরণ হলে ভালো হতো😁😁😁