মা তুঝে সালাম: সফিক আহমেদ
১৯১৪ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে “মাতৃ দিবস” হিসাবে স্বীকৃতি দেন তদানীন্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ তম প্রেসিডেন্ট Woodrow Wilson ।
অধুনা মাতৃ দিবসের প্রতিষ্ঠাতা আনা জার্ভিস কিন্তু এই দিনটির বাণিজ্যিকরণের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন।
৯ই মে ২০২১ এসে গেল সেই মাতৃ দিবস ।
সোশ্যাল মিডিয়া ভরে যাবে পোশাকি মাতৃ বন্দনায়।
ফুল, কার্ড আর উপহার এর বাণিজ্যের হবে চূড়ান্ত রমরমা।
একটা দিন মা কে স্মরণ করা, মায়ের নাম এ উৎসর্গ করার বিরোধী নই, তবে প্রতিদিনের মা কে মনে রাখা আর তাদের নিরন্তর নিরলস ত্যাগকে উপলব্ধি করা যেন সহজাত ভাবে আসে– অপেক্ষা করতে না হয় মাতৃ দিবসের জন্য ।
আজকের মা কিন্তু অতিনাটকীয় রোল মডেল থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে। আজকের মা, বাবার ভূমিকাতেও অনেকটাই অবতীর্ণ ।
সাবেকি ধারায় বাবা ছিলেন উপার্জন করা, সংসারের ব্যয় বহন করা রাশভারী প্রকৃতির গৃহকর্তা আর মা ছিলেন সংসারের যাবতীয় গৃহস্থালি কাজকর্ম, সন্তান পালন, স্বামীসেবায় আত্মনিবেদন করা আত্মবিসর্জন এর প্রতিভূ।
আজকের মা কে দেখা যায় বাবার পরিপূরক অভিভাবকের ভূমিকায়।
আর্থসামাজিক সর্বোচ্চস্তর থেকে সর্ব নিম্নস্তর পর্যন্ত কয়েকটা উদাহরণ দিই এই আজকের মা এর ভূমিকার আর পর্যালোচনা করি আজকের মায়েদের ব্যাপ্তি কতটা।
প্রথমেই যে নামটা মনে এলো সেটা Indra Nooi , ১২ বছর মুখ্য কর্ণধার এর ভূমিকায় বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থা পেপসিকো কে পরিচালনা করেন ইনি। ওঁর মতে মাতৃত্ব একটা পূর্ণ সময়ের চাকরী , বিশেষত বাচ্চারা যখন ছোট থাকে, কার্যনির্বাহক হওয়া ও একটা পূর্ণ সময়ের চাকরি, আবার স্ত্রী-র ভূমিকা পালন করাও একটা প্রায় পূর্ণ সময়ের চাকরি। ২৪ ঘন্টার দিনে– মা, কার্যনির্বাহক, কন্যা, পুত্রবধূ এবং কখনো সখনো নিজের জন্য একটু সময় বার করা সবই করতে হয় দৈনন্দিন এই সীমিত সময়ে। এই সব কিছুর ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছেন তিনি নিরন্তর। ওঁর জীবনকাহিনী দেখলে মনে হয় আজকের মা এর পরিব্যাপ্তি ছাড়িয়ে গেছে আমাদের চিরাচরিত মাতৃত্বের ভূমিকা থেকে ।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিফলনে আমার লেখা গল্প, ” দ্বি ধারা”-র চরিত্র মিনতি মাসির শহরে দৈনিক পাঁচ বাড়ি কাজ করে উপার্জন করা, শহরতলিতে দিনের শেষে ফিরে মাতাল বর আর মেয়েকে রান্না করে খাওয়ানো, মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন সার্থক করতে নিজেকে নিঃশেষ করে ও মুখে হাসি ধরে রাখা মাতৃত্বের আধুনিক রূপ। এখানেও আজকের মাতৃরূপ ভেঙে দেয় বাবা আর মায়ের ভূমিকার সনাতনী ধ্যান ধারণাকে ।
বেশ্যাপল্লীর মায়েরা ও তাদের অবৈধ সন্তান পালন করে তাদেরই তথাকথিত অসামাজিক উপার্জন থেকে। সেখানে কোনো বাবা থাকে না তার দায়িত্ব পালন করতে।
মাতৃত্বের আর এক উজ্জ্বল উদাহরণ নিউজিলান্ড এর প্রধান মন্ত্রী Jacinda Ardern । ইনি প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যিনি ইউনাইটেড নেশন জেনারেল অ্যাসেম্বলি সভায় ৩ মাসের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে যোগ দান করেন এবং ইতিহাস সৃষ্টি করেন। উনি শিশুকে মাতৃ দুঘ্ধ পান করাতেও কুন্ঠিত হননি। অন্য দিকে আমাদের চোখ পিঠে বাঁধা বাচ্চা নিয়ে দিন-মজুর কামিনের কাজ করা দেখেও অভ্যস্ত।
মাতৃ রূপের এই বৈচিত্রকে সম্মান দেওয়া শুধু বছরের একটা মাতৃ দিবসে সম্ভব নয়।
প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে সজ্ঞানে অজ্ঞানে বলতে হবে ” মা তুঝে সালাম “….
৯/৫/২০২১
ছবি অন্তর্জাল থেকে, কৃতজ্ঞতা রইল