সেই কান্না: উদ্দালক ভরদ্বাজ
একটা সবুজ মন ছিল,
আর একটা বিষণ্ণ খয়েরি পাখি।
একটা শতচ্ছিন্ন শতরঞ্চি ছিল
চিলেকোঠার ঘরটাতে।
রাজ্যের শালিখ পাখি এসে জড়ো হত সেটায়
একটু বৃষ্টির উপক্রম দেখলেই।
শুধু বিষণ্ণ খয়েরি পাখিটা যেত না;
একা একা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজত
তুমুল বৃষ্টিতে।
যেন কোনও পরওয়াই নেই।
কিম্বা অপেক্ষায় কারো-
যে আসবে না কোনদিন, তবু…
পথ-চাওয়াতেই শুধু যেন অধিকার তার,
ছেড়েছে প্রত্যাশা বহু দিন।
ভিজে যাওয়া ছাড়া, দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া
আর কোনও অর্থ নেই জীবনে আর।
শুধু বসন্তের উপক্রমে মাঝে মাঝে সে উড়ে যেত
খোয়াই-ঝিল পথের শেষে, যেখানে
জঙ্গল আর আকাশ মিশে থাকে,
সেইখানে একটা রক্ত করবি গাছের কাছে উড়ে যেত সে।
একমনে, নিঝুম দাঁড়িয়ে দেখত-
রক্তের ফোঁটার মত কুঁড়ি থেকে ছোট ছোট ফুলের হয়ে ওঠা
ভারি ভালো লাগত তার।
রৌদ্রের সোনালী এসে জাগাত স্বপ্নের কুঁড়িগুলোকে,
রক্তরঙ সোনা মেখে কি এক অদ্ভুত নেশায় জেগে উঠত উৎসুক কুঁড়িগুলো…
প্রেরণায়, প্রেমে, অসংযমী বাঁচার ইচ্ছায়
দুলে দুলে উঠত ফলন্ত, নিষ্পাপ কুঁড়িগুলো;
ফুল হয়ে ছেয়ে থাকতো মায়ের শরীরে কিছুদিন…
তার পর একদিন হাওয়ার তোড়ে, শুকনো, বাদামি, ঝরে যেত ম্রিয়মাণ।
খয়েরি পাখিটা তখন এক-পা, দু-পা ফেলে ওদের কাছে গিয়ে
আলগোছে ঠোঁটে তুলে, উড়ে যেত।
খরস্রোতা মৃন্ময়ী নদীর জলে মৃত ফুলগুলোকে ভাসিয়ে দিয়ে
চুপ করে দাঁড়াত সে লাগোয়া ঘাসের জমিতে।
দু চোখে শিশিরকণা, হয়ত আলোর চেয়ে অন্ধকার ভারি-
এই ভেবে বাথার শরীরে তার অন্য আলো ছড়াত সে কিছু ক্ষণ
ফিরে যেত তার পর, পশ্চিম আকাশ পেরিয়ে-
তার একান্ত বাসায়,
নিবিড় ঘুমের ঘরে দিত ডুব।
.
খয়েরি পাখিটা-
ভালবাসা পায় নি বলে, ভালবাসত খুব