যখন : আই( I) আর মাই ( My) যায় ঘেঁটে
সুমিতা বসুর কলম থেকে…….
পথে পথে পদে পদে আছে গপ্পো, একটু চোখ কান খোলা রাখলেই… এ কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করি । এরকমই এক গপ্পোর সঙ্গে আজ সকালেই মুখোমুখি।
ইমেইলে হুঙ্কার এসে যাচ্ছে, Groupon- এ pottery class- এর যে কুপন কিনেছি তা নাকি নভেম্বরের ৩০ তারিখে কবরে যাবে, অর্থাৎ will be expired। অতএব নম্বর খুঁজে গত সপ্তাতেই ব্যবস্থা পাকা করে নিয়েছিলাম। ওদের ওয়েবসাইটে বলা আছে একটু আগে যেতে, আর ফোন-এ বলল, ক্লাস শুরু সাড়ে ন’টায়।
পড়ি -মরি ছুটলাম। হবি তো হ’ আজই আবার এখানে ধুম ঠান্ডা (৩০ এর কোটায় )টেক্সাস-এর তুলনায় খুবই, বুঝলাম উত্তর-পূর্বের থাকার অভ্যাস ছেড়ে গেছে !
যাই হোক, মিনিট পাঁচেক আগে পৌঁছে দেখি সব শুনশান, শুধু বেশ কয়েকটা মোরগ তাদের স্ত্রী আর বান্ধবী মুরগীর দল আর অজস্র ছানাপোনা নিয়ে বীর বিক্রমে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক, একটু ঘাড় উঁচু করে আমায় দেখেও বিশেষ পাত্তা দিল না।
হুঁ , ঠিক জায়গাতেই তো এসেছি, বাইরে বড় বড় করে লেখা আছে স্টুডিওর নাম। পাশে… কিন্তু চৌহদ্দির মধ্যেই আরেকটা ছোট্ট বাড়ি। গিয়ে ধাক্কা দিতে এক অশীতিপর বৃদ্ধা বেরিয়ে এলেন, মুখে হাসি, কিন্তু ভয়ানক নড়বড়ে হাঁটা। বেড়িয়েই দরজার পাশে রাখা লাঠিটা নিয়ে, একগাল হেসে বললেন, good morning। প্রত্যুত্তর দিয়ে বললাম, আজ কি ক্লাস এখানে হবে ? মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, yes। আমি একটু ভরসা পেয়ে বললাম, জানো ইন্সট্রাক্টর কে এবং কোথায় ? আবার রোদ ঝলমল হাসি, my mother । শুনে আমার মাথা ঘুরে গেল, বলে কি ? আবার প্রত্যয় নিয়ে বলল, yes, my mother।
আর কথা এগোলাম না, ঢোঁক গিলে ভাবলাম, হায় রে ! আজ কার হাতেই না পড়ব ! এনার মা, নির্ঘাত শত-র ওপর এক কুড়ি তো বটেই !!! Groupon-এর coupon-এ তো ইন্সট্রাক্টরের বয়স লেখে না !
মাত্র halloween গেছে, এই খটখটে দিনের বেলা জানি না কী trick o treat ঘটতে যাচ্ছে।
বৃদ্ধা আমাকে দাঁড়াতে বলে নড়বড় করতে করতে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলেন। আমি যখন ঠান্ডায় আর বিরক্তিতে একা একা ওই জনমানবিহীন প্রান্তরের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত কিড়মিড় করছি, তার প্রায় মিনিট কুড়ি পরে এক গাড়ি ঝাঁ করে এসে থামল। তাড়াহুড়ো করে ড্রাইভার সিট থেকে একজন মাঝবয়সী মহিলা নামলেন। আমায় নাম ধরে ডেকে বললেন, দুঃখিত, গাড়ির সমস্যায় দেরী হয়ে গেল !
হয়তো আওয়াজ পেয়েই, আবার সেই অশীতিপর বৃদ্ধা তাঁর স্বর্ণঝরা (ফোকলা, এবার খেয়াল করলাম ) হাসি নিয়ে বেরিয়ে এলেন। মধ্যবর্তিনীর দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন, good morning, my mother। তখন, সেই মাঝ বয়সী লজ্জা লজ্জা হেসে বললেন, আসলে বলতে চাইছে I’m her mother কিন্তু একদম ইংলিশ জানে না।
বলে কি ? My mother vs I’m her mother or I’m the mother ?
কৌতূহল আর চাপতে পারলাম না, কোন দেশের থেকে এসেছো ?
– ইরান।
-কত বছর ?
– তা ধরো, সাতাশ বছর হল।
-ইংলিশ একেবারে না বললে বা জানলে অসুবিধা হয় না ?
– কিসের অসুবিধে ? মা তো farming নিয়ে ভালোই আছে, আর বাবার একটা কর্নার স্টোর আছে, দিব্বি চলে যায়। আমি আর্টিস্ট আর আমার বোন ডেনটিস্ট, দুজনেই কাছাকাছি থাকি। মা নিয়মিত ফ্রেশ ডিম্ পাড়ায় বিক্রি করে আর ভালোই কামায়।
-বটেই তো বটেই তো, আর কথা বাড়ালাম না ! ধন্য আমেরিকার ইমিগ্র্যান্ট সমাজ।
আমি মনে মনে ভাবলাম, ভাগ্যিস Texas রাজধানী Washington DC থেকে অনেক দূর, আমেরিকার বর্তমান অধীশ্বর এদের খবর পায়নি এখনো।
আরও ভাবলাম, জীবনের এই পর্বে কীই বা যায় আসে ….I আর My-তে খুব বেশি তফাৎ বোধ’য় নেই।
কী মনে হয় আপনাদের ??
ছবি আন্তর্জাল: কৃতজ্ঞতা স্বীকার রইল