বই নিয়ে আলোচনা: নাদিয়া হাশিমির লেখা
সম্প্রতি নাদিয়া হাশিমির লেখা বই পড়লাম, A House Without Windows আর The Pearl That Broke Its Shell । বর্তমান আফগানিস্তনের জীবনযাত্রা আর বিশেষত মেয়েদের ঘিরে লেখা। বুক কেঁপে যায় পড়তে পড়তে, কখনো কখনো দুচোখ ঝাপসা, ওফ… সহ্য করা যায় না– শুধু শব্দ বাক্যের বিন্যাসেও, আর এটাই নাকি আজও দৈনন্দিন জীবনের reality সেখানে? এমনও হয় ? এখনো ? তবু পড়া থামাতে পারিনা, অন্য কাজও পড়ে থাকে, মন চলে যায় কাবুল থেকে কোন গ্রামে যেখানে জেবা, রহিমা/রহিম , বা শাকিবা -এর বাস। ওরা কখনো জেলের এক হাত বাই এক হাত ঘরে হতাশ হয়ে বসে আছে বিচারের আশায়, কখনো তেরো বছরের রহিমা বিয়ের ঠিক দুদিন পরে তার মধ্যবয়সী স্বামীর চতুর্থ স্ত্রী হয়ে ভয়ে ঘেন্নায় একে একে তার সব পোশাক খোলার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কে বিপদের অশনি সংকেতে কেঁপে কেঁপে ওঠে। কখনো সাকিবা শুধু ঠাকুমার মুখে একটু কথা বলার জন্য লাঠি দিয়ে মার খায়, পণ্য হিসেবে দেওয়া হয় তাকে আরেকটা বাড়িতে। সেখানেও জোটে মারধর।
আফগানিস্তানে আজও মেয়েদের নিত্য জীবনযাত্রা আর তার পাশাপাশি তাদের প্রতি অত্যাচার নিয়ে এই উপন্যাসগুলি। এই আদিম কখনো বা হিংস্র পুরুষ-শাসিত সমাজ আজও সগৌরবে নিজের দাপটে চলছে , মেয়েদের দাম যেখানে গরুর থেকেও কম।
লেখিকা নাদিয়া বর্তমানে Washington DC থাকেন তাঁর স্বামী আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে। নাদিয়ার পরিবার এসেছে আফগানিস্তন থেকেই এদেশে, ৭০এর দশকে। প্রফেশন হিসেবে সে pediatrician ও তার স্বামী nuero surgeon। নাদিয়া, তার লেখার আকর্ষণে কাজের মাঝেও সময় করে নিয়ে আমাদের সকলকে উপহার দিয়েছে এই অসাধারণ বইগুলি। আসলে শিকড়ের সন্ধানে নাদিয়া ২০০২ সালে গিয়েছিলো তার মাতৃভূমিতে, তারপর সেখানকার অবস্থা দেখে এসে সেই ভিত্তি করে লেখা এই অসাধারণ উপন্যাসগুলি। পড়তে পড়তে চোখ খুলে যায় এই ভেবে কী করে আজও… এতো কষ্ট অত্যাচার মেয়েদের।
এই বছর বিদ্যাসাগরের দ্বিশত বছর পূর্ণ হলো। তিনি নিজেই বলেছিলেন, বিধবাবিবাহ তাঁর জীবনে সব থেকে পুণ্য কর্ম …. বার বার নাদিয়া হাশিমির বইগুলি পড়তে পড়তে মনে হলো, এক রামমোহন রায়, এক বিদ্যাসাগর, এক রবীন্দ্রনাথ যদি জন্মান ওখানে তবে হয়তো একটু একটু করে বেঁচে যাবে মানুষগুলো ….একটু একটু করে জীবনে ভোর আসবে !