অদ্বৈত মল্লবর্মণের জন্ম, গোকর্ণঘাট গ্রামে, মালোপাড়ায়। শৈশবেই হারিয়েছেন আপনজনদের। আনন্দ হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেছেন ১৯৩৩ এ, অতঃপর কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ। কিন্তু পাঠ অসমাপ্ত রেখে ১৯৩৪ এ পাড়ি জমালেন কলকাতায় জীবিকার সন্ধানে। শৈশবেই বাবা মাকে হারিয়ে তাঁর ঠাঁই মিলেছিল কাকার ঘরে, পড়াশোনার খরচ চলেছে বৃত্তি আর মালোপাড়ার মানুষজনদের চাঁদায়, কারণ মালোপাড়ার তিনিই প্রথম সন্তান যিনি স্কুলের গণ্ডি পার হয়েছিলেন।
মূলতঃ কবিতায় তাঁর হাতখড়ি। লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, ছাপা হয়েছে পত্র পত্রিকায়, প্রতিশ্রুতি জাগিয়ে। কর্মজীবন শুরু করেছেন পত্রিকায়, প্রথমে ‘মহম্মদিয়া’ এবং ‘আজাদ’, অবশেষে ১৯৪৫এ ‘দেশ’ এবং ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায়। এখানেও ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ ও অনুদিত সাহিত্যকর্ম।
ক্ষয়রোগ বাসা বেঁধেছিল অলক্ষ্যে। প্রাথমিক চিকিৎসায় সাড়া মিলেছিল, কিন্তু নির্মূল হয়নি, ফিরে আসে আবার, দ্বিতীয় চিকিৎসা চলাকালীন হাসপাতাল ত্যাগ করেন, দু মাসের মধ্যেই ডাক পড়ে তাঁর অচিনপুরে। মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়েসে থেমে যায় তাঁর লেখনি।
তাঁর সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৫এ। যদিও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’-র সঙ্গে এই উপন্যাসের সাযুজ্য বারেবারে খুঁজে পেয়েছেন সাহিত্য সমালোচকেরা তবুও অমিল অনেক। অমিল প্রধানতঃ দেখার ভঙ্গিমায়। ঔপন্যাসিক এখানে মালো সমাজের বঞ্চনার ইতিহাস বিধৃত করে, প্রতিবাদের সোচ্চার রব তোলেন নি। তিনি এই সমাজের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে, তাই হয়তো তিনি নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে, এদের সুখ দুঃখ আর স্বপ্নকে ছুঁতে চেয়েছেন গভীর মমতায়।
১৬ই এপ্রিল ১৯৫১ তাঁর প্রয়াণ ঘটে।
**এই উপলক্ষ্যে ব্যবহৃত ছবি ও তথ্যগুলি ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত৷ শুধুমাত্র লেখকের রচনাবলির সঙ্গে পাঠকের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য, কোনও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয় ৷**